বান্দরবানের লামা উপজেলায় পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুসারে, তারা চিলেরতুয়া এলাকার মুরুংঝিরি থেকে একযোগে পাথর উত্তোলন করছেন, যা স্থানীয় পরিবেশ ও জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় নদী, খাল, ঝিরি ও ঝরনা। এতে পানির চরম সংকটে পড়েছেন পাহাড়ি জনগণ। গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্বল্পতা এতটাই প্রকট হয়ে উঠছে যে, খাওয়ার পানির জন্যও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন লামা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজ, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জালাল আহম্মেদ হেন্জু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. রাসেল ইসলাম এবং শহিদুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন। তাঁরা প্রায় দুই মাস ধরে অবৈধভাবে মুরুংঝিরি এলাকা থেকে পাথর তুলে ট্রাকযোগে পাচার করছেন।
জানা গেছে, পাচারের জন্য প্রায় ২০ হাজার ঘনফুট পাথর ইতোমধ্যে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বাজারে এসব কংক্রিট পাথরের প্রতি ঘনফুট বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে, যার মাধ্যমে কোটি টাকার বেশি লাভ করছে সংশ্লিষ্টরা।
চংবট ম্রোপাড়ার একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘যেভাবে এখান থেকে পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে ঝিরি ও ঝরনাতে আর পানি নেই।’’
চংবট ম্রোপাড়ার কার্বারি মাংডং ম্রো বলেন, ‘‘পাথর উত্তোলন হচ্ছে মাস দুয়েক আগে থেকে। কিন্তু কে করছে, সেটা বলতে চাই না। সবাই প্রভাবশালী। কথা বললে আমি ঝামেলায় পড়ব।’’
সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলে মিরাজ প্রথমে পাথর উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে বলেন, ‘‘পাথর উত্তোলন করছে বলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়নি। কে কী ব্যবসা করছে, সেটা সাংবাদিকদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই।’’
অন্যদিকে মোহাম্মদ জালাল আহম্মেদ হেন্জু বলেন, ‘‘গত বর্ষায় পাথর উত্তোলনের কারণে আমার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করেছে। সেই মামলা এখনো চলছে। বর্তমানে আমি কোনো পাথর উত্তোলন করছি না।’’
উল্লেখ্য, বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ঝরনা, ঝিরি ও ছড়া থেকে পাথর উত্তোলনে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেয়। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বান্দরবান সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আমাদের একটি টিম সেখানে গেছে, শুনানিও হয়েছে। এরপরও পাথর উত্তোলন হলে আমি আবার যাব।’’
লামা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়েন দেব বলেন, ‘‘অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিষয়টি জানা ছিল না। খুব শিগগিরই আমরা অভিযান চালাব।’’
স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে বাধা দিতে গেলে বিভিন্নভাবে হুমকি, হেনস্তা এমনকি মারধরের শিকার হন। ফলে কেউ সাহস করে মুখ খুলতে পারছেন না।
তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা