রাজনৈতিক মতভেদ সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মতামত একই। সম্প্রতি, রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সম্মেলনের শেষ দিন, বিডা চেয়ারম্যান রাজনৈতিক দলগুলোর বিনিয়োগে আগ্রহ ও তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি জানান, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিগত তিনদিনে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় বর্তমান সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একই সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশিক চৌধুরী বলেন, “এবারই প্রথম রাজনৈতিক দলগুলোকে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা, বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যসংবলিত ডকুমেন্টস এবং উপহার দিয়েছেন। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে, তবে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে তাদের লক্ষ্য এক। বিডা চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, বর্তমানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে কোনো ভিন্ন মতামত নেই।
বিডা চেয়ারম্যান আরো বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম এবং তা উন্নত করতে আইএলওর সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করা হয়েছে। চীনের হান্দা ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি বাংলাদেশে ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এই বিনিয়োগের ফলে আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
আশিক চৌধুরী জানান, আগামী মাসে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী ২০০ বিনিয়োগকারীসহ বাংলাদেশ সফর করবেন। এছাড়াও, জার্মানির বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন। আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড গ্রুপ বাংলাদেশে মাতারবাড়ির কাছে একটি ফ্রি ট্রেড জোন প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। স্পেনের পোশাক জায়ান্ট ইনডিটেক্সও ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী এবং লাফার্জ হোলসিমেরও একটি বড় বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকার প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এই খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং মিলিটারিতে কিছু যন্ত্রপাতি তৈরির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগকারীদের খোঁজা হচ্ছে। ভবিষ্যতে, মিলিটারি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও রয়েছে।
এই সম্মেলন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে তারা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করতে পেরেছেন। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যত বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
তথ্য সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ